সাক্ষাৎকার » আমি একই গল্পে সম্পূর্ণ আলাদা একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছি : সোফিয়া কপোলা
আমি একই গল্পে সম্পূর্ণ আলাদা একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছি : সোফিয়া কপোলা
শুরুটা করেছিলেন বিখ্যাত ট্রিলজি দ্য গডফাদার-এ অভিনয় দিয়ে। অভিনয় যে খারাপ করতেন তাও না। কিন্তু পরিচালক বাবার মেয়ে আর কতো দিনইবা ক্যামেরার সামনে থাকবেন। চলে যান ক্যামেরার পিছনে। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি যৌথভাবে লিখেন নিউইয়র্ক স্টোরিস-এর অংশ ‘লাইফ উইদআউট জো’-এর স্ক্রিপ্ট। ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র লিক দ্য স্টার-এর মাধ্যমে নির্মাতার খাতায় নাম লেখান তিনি। সময়ের পরিক্রমায় জয় করেন গোল্ডেন বিয়ার, অস্কার। যেটা বাকি ছিলো তাও জিতে নেন দ্য বিগাইল্ড (২০১৭) পুনর্নির্মাণ করে। কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা নির্মাতা হয়ে গড়েন রেকর্ড। কান-এর ইতিহাসে সেরা দ্বিতীয় নারী চলচ্চিত্রনির্মাতার সম্মান পান তিনি। ৫৬ বছর পর কোনো নারী নির্মাতার নামের পাশে এমন সাফল্য যোগ করতে তিনি সক্ষম হন। বলছি সোফিয়া কারমিন কপোলার কথা। আমেরিকান এই চিত্রনাট্যকার, নির্মাতা, প্রযোজক ও অভিনয়শিল্পী সোফিয়া কপোলা নামেই পরিচিত। ১৪ মে ১৯৭১, নিউইয়র্ক সিটির এক চলচ্চিত্রিক পরিবারে জন্ম নেন তিনি। বাবা ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা একাধারে নির্মাতা, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার। মা ছিলেন সেট নকশাকার। এমনকি তার দাদু কারমিন কপোলাও ছিলেন একাধারে কম্পোজার, বাঁশি বাদক, সম্পাদক, সঙ্গীত পরিচালক ও গীতিকার।
১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে সেইন্ট হেলেনা স্কুল থেকে স্নাতক পাস করেন সোফিয়া। এরপর পড়াশোনা করেন মিলস কলেজ ও ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব আর্টস-এ। বাবা ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা’র দ্য গডফাদার-এ শিশু চরিত্রে হাতেখড়ির পর অভিনয় করেন বাবারই নির্মিত সাতটি চলচ্চিত্রে। উপন্যাস থেকে নিজের লেখা চিত্রনাট্যে তিনি দ্য ভার্জিন সুইসাইড (১৯৯৯) নির্মাণের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে সক্রিয়ভাবে পথচলা শুরু করেন। পরের বছর চলচ্চিত্রটি উত্তর আমেরিকার সানডেস ফিল্ম ফেস্টিভালে সমালোচকদের প্রশংসা কুঁড়ায়। এর পর ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে সোফিয়ার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র লস্ট ইন ট্রান্সলেশন ব্যাপক সাড়া ফেলে। বিশ্বের তৃতীয় নারী নির্মাতা হিসেবে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড মনোনয়নের সম্মান এবং দ্বিতীয় নারী নির্মাতা হিসেবে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন সোফিয়া। এমনকি তিনিই প্রথম আমেরিকান নারী নির্মাতা, যিনি শ্রেষ্ঠ নির্মাতার মনোনয়ন পান। এছাড়া লস্ট ইন ট্রান্সলেশন (২০০৩) তাকে এনে দেয় তিনটি গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড।
পরের বছর অস্কার কমিটিতে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় সোফিয়াকে। ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ঐতিহাসিক অ্যান্টোনিয়া ফ্রেজারের জীবনী নিয়ে তিনি নির্মাণ করেন ম্যারি অ্যান্টোনেটি (Marie Antoinette)। চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করে কস্টিউম ডিজাইনে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড পান তিনি। এর পর ২০১০ খ্রিস্টাব্দে তিনি সামহয়্যার নির্মাণ করে ৬৭তম ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের গোল্ডেন লায়ন অর্জন করেন। ২০১৩-তে নির্মিত দ্য ব্লিঙ রিঙ কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘আন সারটেইন’ বিভাগে উন্মুক্ত করা হয়। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি নির্মাণ করেন অ্যা ভেরি মারে ক্রিসমাস। চলচ্চিত্র নির্মাণের পাশাপাশি সোফিয়া টেলিভিশন সিরিজ, মডেলিং ও মঞ্চ নির্দেশনার কাজও করেছেন। সোফিয়ার দ্য বিগাইল্ড ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে ডোনাল্ড সিইগেল নির্মিত দ্য বিগাইল্ড-এর পুনর্নির্মাণ হলেও সোফিয়ার অন্যতম নারীবাদী কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয় চলচ্চিত্রটিকে।
সোফিয়া ১৯ মে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে ক্যালিফোর্নিয়ার বেভারলিহিল্স-এ দ্য বিগাইল্ড নিয়ে কথা বলেছেন মার্কিন গীতিকার ও সঙ্গীত প্রযোজক ক্রিস্টেন লোপেজ-এর সঙ্গে। ম্যাজিক লণ্ঠন-এর পাঠকের জন্য এই সাক্ষাৎকার বাংলায় ভাব-ভাষান্তর করা হয়েছে।
ক্রিস্টেন লোপেজ : ক্লিন্ট ইস্টউড যেভাবে দ্য বিগাইল্ড (১৯৭১)-এর সঙ্গে ছিলেন, এটা ছিলো তার সক্ষমতা দেখানোর প্রয়াস। কিন্তু আপনি তো ইতোমধ্যে আপনার সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছেন। তাহলে এটি আপনার জন্য কী এমন অনুপ্রেরণা ছিলো, যে কারণে আপনি চলচ্চিত্রটি পুনর্নির্মাণ করলেন?
সোফিয়া কপোলা : আমি যখন প্রথম দ্য বিগাইল্ড দেখি, অভিনয়শিল্পী ক্লিন্ট ইস্টউড এবং ডোনাল্ড সিইগেল-এর মতো নির্মাতার ব্যক্তিত্ব আমাকে দারুণভাবে আকর্ষিত করেছিলো। কী দুর্দান্তভাবে তারা আমেরিকার দক্ষিণের একটি মেয়েদের স্কুলের গল্প বলেছে। তারা মূলত সেই গল্পে পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একদল নারীকে দেখার চেষ্টা করেছিলো। তো আমি ভাবলাম ঠিকই আছে, কোনো সমস্যা নেই। তবে আমি ঠিক তার উল্টোটা করতে চেয়েছি¾গল্পটা দেখতে চেয়েছি নারীর অবস্থান থেকে।
লোপেজ : পুরনো দ্য বিগাইল্ড যতোটা সম্ভব আমি উপভোগ করেছি। এটা মজাদারও! কেননা ক্লিন্ট ইস্টউডের বলার অভিপ্রায় বেশ চমৎকার! নারীর গতানুগতিক অবস্থান থেকেই তিনি এটা করেছেন।
সোফিয়া : আমি আসলে ওই চলচ্চিত্রটার কথা ভুলে গেছি! আমি এখন ওটা পুনরায় দেখতে চাই। এই কাজ শুরুর আগে আমি ওটা দেখেছিলাম; কাজ শুরুর পর আর কখনো দেখিনি। তবে ওটা সবসময় আমার মাথায় ছিলো। আমি মনে করি, পুরনো দ্য বিগাইল্ড-এর ওই নারীদের আমি একটা ভাষা দিয়েছি। তারপর আমি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে একটু অন্যভাবে দেখা এবং যুদ্ধের সময় নারীদের অবস্থা তুলে ধরার বিষয়টি নিয়ে ভেবেছি। সাধারণত যুদ্ধে আপনি সবসময় পুরুষের গল্প দেখবেন; কিন্তু আমি দেখেছি এর পিছনে নারীদের ক্ষেত্রে ঠিক কী ঘটে। এক্ষেত্রে আমি সবসময় দক্ষিণের (এখানে দক্ষিণ বলতে, Southern United States বা দক্ষিণের যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝানো হয়েছে। যদিও ভৌগোলিকভাবে এই অঞ্চলের অবস্থান পুরোপুরি আমেরিকার দক্ষিণে নয়। এখানে অনেক ধরনের নৃ জাতিসত্তার লোকজনের বসবাস। আমেরিকার এই রাজ্যগুলো একসঙ্গে Confederate States of America-এর জন্য লড়াই করেছে) নারীদের পছন্দ করেছি, কারণ তারাই সাধারণ। তাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত এবং আলাদা।
লোপেজ : আপনার সব চলচ্চিত্রের কস্টিউম বেশ চমৎকার। কিন্তু দ্য বিগাইল্ড-এর মূল চলচ্চিত্রটির কস্টিউম অনেকটা আলোহীন ও একঘেয়েমি।
সোফিয়া : ওই চলচ্চিত্রটির পুরো প্যালেটটি (palette, চিত্রশিল্পীর রঙ গোলানো বা মেশানোর জন্য তক্তা বিশেষ) খুবই আলোহীন। দক্ষিণের পৃথিবীর অনুজ্জ্বল, আলোহীন অবস্থা থেকে আসা মানুষদের প্রকৃত বৈষম্য তুলে ধরার জন্যই হয়তো এই অনুজ্জ্বল চিত্রায়ণ। তবে আমি আমার চলচ্চিত্রে তাদেরকে অতি-নারীবাদী, লেইসি’র ওয়ার্ল্ডের (lacy worlds) মতো করে নির্মাণ করতে চেয়েছি।
লোপেজ : আপনি কি কোনোভাবে দক্ষিণের গোথিক (Gothic) জাতি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন? কিছু নির্দিষ্ট শটে তো ফকনারের (আমেরিকান লেখক উইলিয়াম কান্সবার্ট ফকনার উপন্যাস ও ছোটোগল্পের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের জন্য চিত্রনাট্যও লিখেছেন। দক্ষিণের সাহিত্যে তার অবদান অনন্য) বিশেষ প্রভাব রয়েছে।
সোফিয়া : আমি আসলে দক্ষিণের ওই মানুষগুলোকে (Gothic) আঁকড়ে ধরে ছিলাম। কারণ আমি কখনোই এই জাতির মধ্যে কিছু করতে চাইনি। ওদের কাছ থেকে কোনোকিছু পাওয়ায় মজা ছিলো।
লোপেজ : আপনি তো লুইসিয়ানায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। সেখানকার অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিলো?
সোফিয়া : মূলত সেখানে আমাদের যাওয়ার কথা ছিলো আগস্টে, ভাগ্যক্রমে আমরা শরতে ওখানে শুটিং করেছি। সবাই অবশ্য এটা পছন্দ করেছিলো। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, ভাগ্যিস তুমি ওখানে ছিলে না। ওখানে মশা আর গরম হলেও আমার কিন্তু থাকতে বেশ ভালো লেগেছে। নিঃসন্দেহে অন্য অনেক জায়গার চেয়ে শহর হিসেবে এটি চমৎকার। সব দিক থেকেই এই জায়গাটি অনন্য; বাড়িগুলো দেখতে আশ্চর্য রকমের ভুতুড়ে; আর মানুষগুলো তো অসাধারণ! সেখানকার অনেক গল্প-ইতিহাস রয়েছে। আমি নিউইয়র্কে থাকি; তবে ওখানকার লোকেরা অনেক বেশি সহজসরল আর ধীরস্থির প্রকৃতির। আমি যখন প্রথম নিউইয়র্কে ফিরে এলাম, আমাকে সেখানকার সবকিছুর সঙ্গে পুরোদস্তুর অভ্যস্ত হতে হয়েছিলো। গান, খাবার-দাবার আর পানীয় নিয়ে থাকা ওই শহরটাকে আমি খুব ভালোবাসি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ওরা জানে কীভাবে জীবনকে উপভোগ করতে হয়।
লোপেজ : যে স্থানে লেমোনেড-এর শুটিং হয়েছিলো, একই জায়গায় আপনার চলচ্চিত্রের শুটিংও করেছেন।
সোফিয়া : ওই স্থানের একটা অন্ধকার ইতিহাস আছে। ওরা সুন্দর কিন্তু একটা অন্ধকার দিক আছে তাদের। যাক, সেখানে ঘরের ভিতরের দৃশ্য দেখানোর জন্য আমাদের একটি বাড়ি ছিলো এবং আরেকটি ছিলো বাহিরের দৃশ্যের জন্য। দুটি মিলে আমরা একটি বাড়ি বানিয়েছিলাম। ভিতরের দৃশ্যের জন্য আমরা শহরেরই একটি বাড়িতে শুট্ করি। তবে বাড়ির বাইরের দৃশ্য ধারণের জন্য সেই স্থানে যেতে হতো আমাদের। শিল্প নির্দেশনায় আমাদের একটি ভালো দল ছিলো, যেখানকার বেশিরভাগই নারী। দ্য বিগাইল্ড-এ করপোরাল জন ম্যাকবার্নি’র চরিত্রে অভিনয় করা কলিন ফ্যারেল যখন ফিতা দিয়ে বাঁধা বালিশের পাশে শুয়েছিলেন, তা দেখতে খুবই মজার লাগছিলো। এই এলাকায় বিশেষ ধরনের যে স্প্যানিশ কচুরিপানা সেটাও আমার খুব ভালো লেগেছিলো; এগুলো যেমন সুন্দর, ঠিক তেমনই গা ছমছমে। মূলত কাহিনিকে ফুটিয়ে তুলতে আমার এই ধরনেরই একটি বাস্তবধর্মী অবস্থানে দৃশ্যধারণ জরুরি ছিলো। সবমিলিয়ে এটা ছিলো আমার জন্য খুবই উৎসাহব্যঞ্জক।
লোপেজ : আপনি একসময় বলেছিলেন, পিকনিক অ্যাট হ্যাঙ্গিঙ রক (জোয়ান লিন্ডসে এর ‘পিকনিক অ্যাট হ্যাঙ্গিঙ রক’ নামের উপন্যাস থেকে পিটার উইয়ার ওই নামে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন) চলচ্চিত্রটি আপনাকে এই কাজে উদ্বুদ্ধ করেছে। সেটি কীভাবে?
সোফিয়া : আসলে চলচ্চিত্রটি আমি দেখিনি, তবে এর কিছু দৃশ্য দেখেছিলাম। নান্দনিক জায়গা থেকে এটি ভার্জিন সুইসাইড-এর মতোই। যেখানে ৭০-এর দশকের নান্দনিক ফটোগ্রাফির ছোঁয়া রয়েছে; যেমন, গম ক্ষেতের মধ্যে একটি মেয়ে ফিতাওয়ালা জামা পরে দাঁড়িয়ে আছে। ডেভিড হ্যামিল্টন-এর (ব্রিটিশ আলোকচিত্রী ও চলচ্চিত্রনির্মাতা; ১৫ এপ্রিল ১৯৩৩-২৫ নভেম্বর ২০১৬) ৭০ দশকের ওইসব ইমেজ আমার খুব ভালো লাগে।
লোপেজ : ভার্জিন সুইসাইড-এর সঙ্গে আমি এর অনেকগুলো মিল দেখেছি। যখন আপনি শুটিং করেছেন, তখন কি আপনি ওইটার মতোই কিছু করতে চেয়েছেন?
সোফিয়া : যখন আমি দেখি দুটি চলচ্চিত্রের চরিত্রগুলোর মধ্যে উচ্চ স্বরে কথা বলা, পুষ্পশোভিত পোশাক পরা, বাড়িতে বন্দি থাকার মতো বিষয়গুলো রয়েছে, তখন অবশ্যই এর মধ্যে মিল রয়েছে। দ্য বিগাইল্ড-এ প্রথমবার যখন ম্যাকবার্নি রাতের খাবার খেতে আসেন, তখন দুটি চলচ্চিত্রেই বোঝা যায় পুরুষের চরিত্র কতো রহস্যময়!
আমি মনে করি, এই দুটোর মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু কোনো না কোনোভাবে ভার্জিন সুইসাইড-এর চেয়ে দ্য বিগাইল্ড ঘটনার আরো গভীরে প্রবেশ করেছে। হয়তো ভার্জিন সুইসাইড-এর চেয়ে এজন্যই দ্য বিগাইল্ড এগিয়ে।
লোপেজ : আপনি এখানে সব প্রতিভাবান অভিনয়শিল্পীদের আশ্চর্যজনকভাবে একসঙ্গে পেয়েছেন। ক্রিস্টেন ডাস্ট ও এলি ফ্যানিংকে দিয়ে আবারও একসঙ্গে কাজ করিয়েছেন। শুধু তাই নয়, আপনি বছরের অন্যতম সফল অভিনয়শিল্পী নিকোল কিডম্যান’কেও পেয়েছেন। আপনি যখন এই কাজটি শুরু করেন, তখন কি ভেবেছিলেন সবাইকে এভাবে একসঙ্গে পাবেন?
সোফিয়া : আমি সত্যিই ভাগ্যবান, আমি যে চরিত্রে যাদের ভেবেছিলাম, সবাইকে পেয়েছি। যখন আমি প্রথমদিকে এই চলচ্চিত্র নিয়ে ভাবছিলাম, তখন বলেছিলাম, ক্রিস্টেনকে শিক্ষক এবং এলিকে শিক্ষার্থী হিসেবে পেলে ভালো হতো। কারণ তারা আমার বেশ পছন্দের। তাছাড়া কামাতুর, দাম্ভিক নারীচরিত্রে অভিনয়ের জন্য এলির বয়সও উপযুক্ত ছিলো। এটা তার জন্য নিঃসন্দেহে মজার একটি চরিত্র হবে, কেননা এটি এলির ব্যক্তি চরিত্রের পুরো উল্টো।
আর ক্রিস্টেনকে আমি নিপীড়নকারী এক নারীচরিত্রে দেখতেই পছন্দ করবো; কারণ এটি তারও ব্যক্তি চরিত্রের একেবারে বিপরীত। ক্রিস্টেনকে কখনোই আমি এ ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখিনি। আমি নিকোলকে সবসময়ই পছন্দ করি। মূলত নিকোলকে মাথায় রেখেই আমি এই চরিত্রটি লিখেছিলাম। কারণ ভেবেছিলাম, এই চরিত্রে তাকে খুব ভালো মানাবে¾আমি তার সূক্ষ্ম রসবোধেরও ভীষণ ভক্ত। কলিন ফারেলকে এই চরিত্রে নেওয়ার আগে আমি আরো অনেককেই এর জন্য দেখেছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমরা তাকে বেছে নিয়েছিলাম, কারণ তিনি নিঃসন্দেহে পৌরুষদীপ্ত এবং সহজাতভাবেই বিশেষ ধরনের ক্ষমতার অধিকারী। তিনি এমন এক ব্যক্তি, যাকে দেখলেই নারীরা তাকে নিয়ে চিন্তা করতে বাধ্য হয়!
লোপেজ : মূল চলচ্চিত্রটি ক্লিন্ট ইস্টউডের ব্যক্তিত্বের পুনর্নির্মাণ এবং তার সম্পর্কে সাধারণের যে ধারণা তা থেকে বের করে আনার একটা প্রচেষ্টা ছিলো। কলিন ফারেল’কে নিয়েও একই ধরনের ভাবনা প্রচলিত আছে। তাহলে কলিনকে কি আপনি উদ্দেশ্যমূলকভাবেই পছন্দ করেছিলেন?
সোফিয়া : সত্যি বলতে কি, আমি এভাবে ভাবিইনি! তিনি নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয় এবং সহজাত বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন; নারীরা তাকে পছন্দ করে। আমি স্কুলে বাচ্চাদের নিয়ে আসা মা, আমার বন্ধুরাসহ অনেক নারীর কাছেই জানতে চেয়েছি, ক্লিন্ট ও কলিনের মধ্যে কে বেশি আকর্ষণীয়? জবাবে তারা যা বলেছিলো, সেটা খুবই মজার। ব্যক্তিগতভাবে কলিনের একটা খারাপ ইমেজ আছে। তবে তার চরিত্রে মাধুর্যও আছে। তাই তাকে নীরস হলে চলবে না; তার চরিত্রের মধ্যে এমন একটা জটিলতা থাকতে হবে, যা দিয়ে তিনি নারীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারবেন। তিনি জানেন, প্রত্যেকটা চরিত্রের সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে নিতে হয়। সেই সময় থেকেই তার প্রতি আমার আস্থা আসে। আমি তার অতীত সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে কিছু বলেননি।
লোপেজ : আপনার চলচ্চিত্রে সবসময়ই নারী স্বাধীনতার ওপর জোর দেওয়া হয়¾এটা আক্ষরিক নাকি যৌনতার ক্ষেত্রে?
সোফিয়া : আমি নারী স্বাধীনতার বিষয়ে জোর দেই, কারণ এটা আমি আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে করি এবং এটাই আমার চলচ্চিত্রে দেখতে চাই। কিংবা এমনও হতে পারে, নারীদের যেভাবে তুলে ধরা হয়, সে সম্পর্কে আমি ঠিক কী ভাবছি। এটা খুবই ভালো যে, কলিন আমাদের আলোচনার কেন্দ্রে ছিলো। যখন আমরা বাগানের সিক্যুয়েন্স নিই, তখন শুধু সেটিই নয়, একই সঙ্গে আমরা একটা সময়কে তুলে ধরেছি। সত্যিই তিনি দারুণ একজন অভিনয়শিল্পী! তাকে চলচ্চিত্রের মূল বিষয়বস্তু করে তোলাটা মজার ছিলো।
লোপেজ : আপনি কি নিজেকে নারীবাদী নির্মাতা মনে করেন?
সোফিয়া : আমি এ বিষয়টি কখনোই ভেবে দেখেনি। এমনকি আমি কখনোই নিজেকে একটি শ্রেণিতে ফেলতে চাইনি। আমার যা ভালো লাগে, আমি সেগুলোই নির্মাণ করি। নারীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার বিষয়টিকে আমি আঁকড়ে থাকতে চাই। আমি সবসময় এমন চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চেয়েছি, যেখানে নারীদের সম্মানিত করে তুলে ধরা হবে। কারণ আমি যখন বেড়ে উঠি, তখন সেই সম্মানটা আমি অনুভব করিনি। অনেক চলচ্চিত্রেই এগুলো দেখানো হয়নি। জন হিউজস’কে (পুরো নাম জন উইলডেন হিউজস, আমেরিকান নির্মাতা, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার) আমি পছন্দ করি, কিন্তু তার নির্মিত চরিত্রগুলোও এর ব্যতিক্রম ছিলো না। এসব চলচ্চিত্রে ৩৫ বছরের নারীদেরও কিশোরীর ভূমিকায় দেখানো হতো। এমনকি কিশোর-কিশোরীদের জন্য নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোও ভালো ছিলো না। কিন্তু কিশোর-কিশোরীদের কেনো নান্দনিক বা ভালোভাবে উপস্থাপন করা হবে না?
লোপেজ : দ্য বিগাইল্ড ও ভার্জিন সুইসাইড আমার কাছে একটি বিষয়ের দুটি অংশ মনে হয়। নির্মাতা হিসেবে এক্ষেত্রে আপনার পরিবর্তনকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সোফিয়া : ভার্জিন সুইসাইড-এর চেয়ে দ্য বিগাইল্ড আরো বেশি সাবালক এবং গভীর। আমার ধারণা, বাবা-মা কী ভাববে তা নিয়ে আমি কমই চিন্তা করি এবং লজ্জা পাই। নানা বয়সি নারী ও তাদের পরিপক্কতা নিয়ে আমার বিশেষ ধরনের ধারণা রয়েছে। কেননা, আমিও এ রকম নানা স্তর পার করে এখানে এসেছি। আমার এই বয়সও ছিলো¾যখন আপনি আবিষ্কার করছেন কীভাবে একজন নারী পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়। একই সঙ্গে আমি এও জানি, একজন সন্তানসম্ভবা নারীর অনুভূতি কী?
লোপেজ : রাজনৈতিকভাবে বলতে গেলে চলচ্চিত্রটি একটা ভালো সময়ে মুক্তি পাচ্ছে।
সোফিয়া : যখন নারীরা বুঝতে পারবে তারা হতাশ, তারা নিজের সবকিছু করবে। এটা খুবই কম দেখা যায় যে, নারীরা ক্ষমতাবান এবং পুরুষ সেখানে অসহায়। আর এ ধরনের গল্প তুলে ধরার মজাই আলাদা। এটা খুবই খারাপ লাগছে যে, এটা দেখার জন্য ডোনাল্ড সিইগেল এখানে নেই। আমার কাছে এটা আশ্চর্য লাগে, কীভাবে ক্লিন্ট এটা শুধু নিজের জন্য করেছেন? সত্যি বলতে কি, আমি কোনো চলচ্চিত্র পুনর্নির্মাণ করা মোটেও পছন্দ করি না। আমি কেনো আবার সেই চলচ্চিত্র নির্মাণ করবো, যা ইতোমধ্যে কেউ না কেউ নির্মাণ করেছে? কিন্তু এই চলচ্চিত্র নির্মাণের পর আমার মনে হয়েছে, আমি একই গল্পে সম্পূর্ণ আলাদা একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছি।
লোপেজ : এ গল্পের খলঅভিনেতা কে? আদতে কেউ কি আছে?
সোফিয়া : কলিন ফারেলের প্রতি দর্শকের সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠা নিয়ে আমি খুব উদ্বিগ্ন ছিলাম। কারণ আমি চেয়েছিলাম, দর্শক যেনো নারীদের পাশে থাকে। আমার মনে হয়, ওইসব নারী ও কলিনের মধ্যে যেটা চলছে সেটা ক্ষমতার খেলা। চলচ্চিত্রের শুরুটা আমার খুবই পছন্দের, যেখানে মনে হয় এটি একটা কল্পনার রাজ্য, স্বর্গ। আর কলিন সেখানে নিজেকে ভাবতে থাকেন, তিনিই সর্বেসর্বা। নারীবেষ্টিত ওই বাড়িতে তিনি চাইলেই সবকিছু করতে পারেন। অতঃপর এটি তার দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। এই গল্প লিখতে গিয়ে আমি খুব মজা পেয়েছি।
লোপেজ : আমি নিকোলকে খলচরিত্র হিসেবে দেখেছি। এক্ষেত্রে তিনি কতোটা প্রভাবশালী?
সোফিয়া : তিনি সবার ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। আমি সেই চরিত্রগুলোই পছন্দ করি, যেটা শুধু সাদা বা কালো নয়। কারণ একই সঙ্গে তিনি তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও রক্ষাকারীও। ক্রিস্টেন চরিত্রটি এখানে খল। তবে আমার তাকে এজন্যই পছন্দ যে, তার ভালো দিকও রয়েছে। তার চরিত্রের কোনো দিকই স্পষ্ট নয়। অন্যদিকে কলিন খারাপ মানুষ; কিন্তু সহানুভূতিশীলও বটে।
লোপেজ : মজার বিষয় হলো, এই চলচ্চিত্রে এলির করা চরিত্রের জন্য আমার কিছুটা সহানুভূতি রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, মূল চলচ্চিত্রে তিনি উপস্থাপিত হয়েছেন যৌনদাসী হিসেবে।
সোফিয়া : যখন আমি বইটি (Thomas P. Cullinan-এর উপন্যাস ‘A Painted Devil’) পড়ি, তখন ওই চরিত্রটির একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমি লক্ষ করি। যেখানে মা তার মেয়ের জন্য একজন ধনী স্বামী জোগাড় করতে চান এবং মেয়েকে পুরুষের কাছে আকর্ষণীয় হতে উৎসাহিত করেন। আমার মনে হয়েছে, এটা একটা মজার ব্যাপার। কেননা এমন অনেক নারীই আছে, যারা এই ধরনের পরিবেশে বেড়ে উঠেছে। সৌভাগ্যক্রমে আমি তাদের মতো নই। আপনি অবশ্যই দেখে থাকবেন, সেই নারীরা চিন্তা করে যে পুরুষের কাছে আকর্ষণীয় হওয়াই তাদের একমাত্র পরিচয়। কিন্তু তিনি (এলি) অন্য যেকোনো যৌনকর্মীর মতো নন; বরং তার পিছনে একটা গল্প আছে।
লোপেজ : আপনার দ্য বিগাইল্ড-এ কয়েকটি চরিত্র আছে, যারা তাদের পারিপার্শ্বিকতা থেকে বিচ্ছিন্ন। এর মধ্য দিয়ে আপনি এই চলচ্চিত্রে যে বিষয়টি বার বার তুলে ধরতে চেয়েছেন¾মানুষ কীভাবে একাকিত্ব অনুভব করে।
সোফিয়া : সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করে কেনো আমি এটা করি? আমি মনে করি, এর মধ্যে নারীর অভিজ্ঞতার একটা উপাদান আছে, যা একটি নির্দিষ্ট চৌহদ্দিতে থাকে। এই অভিজ্ঞতার সঙ্গে এটা সম্পর্কযুক্ত হতে পারে।
লোপেজ : ভার্জিন সুইসাইড, ম্যারি অ্যান্টিনিয়েট ও সাম্প্রতিক দ্য বিগাইল্ড-এ নারীকে অতিপ্রাকৃত শক্তির কাছাকাছি এবং তাদের গুপ্ত চক্রান্তের বিষয়টি লক্ষণীয়। এখন প্রশ্ন হলো, চলচ্চিত্রে নারীদের নিয়ে আপনার চিন্তাভাবনা কী এবং সাধারণভাবে চলচ্চিত্রে একদল নারীকে কীভাবে তুলে ধরা হয়?
সোফিয়া : আমি মনে করি, এক দল নারী কিংবা মেয়ের লুক্কায়িত, শক্তিশালী প্রভাব এবং গতিশীলতা রয়েছে। এসব নারী পৃথিবী থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন; তারা এখন প্রায়ই আলোচনার বিষয়। আমি অনেক পুরুষের মধ্যে বেড়ে উঠেছি। তবে আমি আমার বোনদের অভাব অনুভব করি। নারীদের বন্ধুত্ব আমার কাছে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি মেয়েদের যে আবাসিক স্কুল আছে, সেটাও সবসময় আমার কাছে আকর্ষণীয়।
লোপেজ : কান চলচ্চিত্র উৎসবে আপনি কেমন বোধ করেন?
সোফিয়া : এটা নিয়ে তো আমি বেশ উত্তেজিত। যখন আপনি বিশ্বের কাছে কিছু তুলে ধরবেন, তখন সামান্য হলেও ভয় কাজ করে। চলচ্চিত্রটি সময় মতো শেষ করতে পারা নিয়ে আমরা শঙ্কায় ছিলাম। ক্রিস্টেন ও এল’কে প্রথমবারের মতো বড়ো পর্দায় দেখে আমি খানিকটা উত্তেজিত হই। তাছাড়া সংবাদ সম্মেলন সবসময়ই ভীতিকর। সেখানে কিছু সাংবাদিক আমাকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করে; তবে সেটা ছিলো আরো বেশি আকর্ষণীয়।
লোপেজ : দ্য বিগাইল্ড-এর আগের যে চিত্রনাট্য এবং বর্তমানেরটা দুটো মিলিয়েই আপনি কাজ করেছেন। এ সময় আপনি কোনটাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন?
সোফিয়া : মৌলিক চিত্রনাট্য লেখা আমার জন্য সবসময় কষ্টকর। আগের চিত্রনাট্যেই আমি নিজের মতো কিছু কাজ করেছি; কিন্তু এই কাজটিও বেশ কঠিন। কোনোকিছুর মধ্যে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া আসলেই কঠিন। এটা অনেকটা ধাঁধা মেলানোর মতো। আমার এভাবে কাজ করতে ভালোই লাগে; কারণ আমি বই থেকে এটাকে পৃথক করেছিলাম।
লোপেজ : যখন সামহয়্যার মুক্তি পায়, বেশ সমালোচনা হয়েছিলো। বলা হয়েছিলো, আপনি যা জানেন, তা দিয়েই লেখা এটা একটা সাধারণ স্ক্রিপ্ট। এ নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
সোফিয়া : আমি মনে করি, আপনারা সবাই এটা করতে পারেন। আমি কিছু জিনিস বিশুদ্ধভাবে করতে চাই এবং তাতেই আমি খুব স্বস্তিবোধ করি। কখনো কখনো আমি উদ্বিগ্ন হই এই ভেবে যে, আমার চরিত্রগুলো খুব বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত। আমি যে পৃথিবীকে জানি, সেটা ওই রকমেরই। আমার ধারণা, আমি কেবল তাই লিখতে পারি, যা আমি জানি। তবে কিছু জিনিস আছে, মানবিক দিক থেকে যেগুলো সর্বজনীন। সেই বিষয়গুলোর সঙ্গে সবাই সম্পৃক্ত হতে পারে। আমি মনে করি, আপনার যে বিষয় নিয়ে আগ্রহ আছে, যা আপনি বলতে চান, তাই লিখতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে, এর মধ্যে দিয়ে আপনার পুরো পরিচয় নির্ধারণ করতে হবে।
ম্যারি অ্যান্টিনিয়েট-এর পরে আমি সামহয়্যার নির্মাণ করি। সামহয়্যার-এর মাধ্যমে আমি দেখতে চেয়েছিলাম, কীভাবে স্বল্প পরিসরে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা যায়। কীভাবে সহজে এটা করা যায় এবং সেটি চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে?
লোপেজ : ভালোলাগা সত্ত্বেও সেটা করেননি, এমন কোনো ধরনের চলচ্চিত্র কি আছে?
সোফিয়া : এ নিয়ে আমি কখনো ভাবিনি। আমি সবসময় সবধরনের চলচ্চিত্রের প্রশংসা করেছি। কিন্তু আমি কখনোই ওই ধরনের একটি চলচ্চিত্রও বানাতে চাইনি।
লোপেজ : আমি সোফিয়া কপোলাকে একটি সঙ্গীতনির্ভর চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুরোধ করছি!
সোফিয়া : মনে হয়, এটা আমার জন্য আতঙ্কজনক হবে। আমি কখনোই এই ধারার চলচ্চিত্রের কথা ভাবিনি এবং করিওনি। কিন্তু এটা মজার ছিলো, ওই জগতে আমার ছাপ রাখার জন্য।
লোপেজ : আমি মনে মনে ভাবি, আপনি কোনো একদিন অস্কার আইজ্যাকের (গুয়েতামালান-আমেরিকান অভিনয়শিল্পী ও সঙ্গীতকার) সঙ্গে চলচ্চিত্র বানাবেন। নারী-পুরুষ অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে আপনার কি কোনো তালিকা আছে, যাদের সঙ্গে আপনি কাজ করতে চান?
সোফিয়া : আমি এটা করি না। কিন্তু আমি সবসময় এডি মারফি’কে (পুরো নাম এডওয়ার্ড রিগান মারফি। আমেরিকান কমেডিয়ান, লেখক, গায়ক ও প্রযোজক) নিয়ে কিছু চিন্তা করতে চেয়েছি। আমি মনে করি, তিনি অত্যন্ত বড়ো মাপের মানুষ। তাকে নিয়ে আমি আকর্ষণীয় কিছু করে দেখতে চাই। যখন আমি কোনো প্রকল্পে কাজ শুরু করি, তখন অভিনয়শিল্পীদের ছবি দেখি। কারণ এটা আমাকে লিখতে সাহায্য করে। আমি সেই চলচ্চিত্রটি শেষ করার ব্যাপারে অত্যন্ত মনোযোগী থাকি, এর থেকে বের হয়ে আসার ব্যাপারাটা চিন্তা করাও কারো জন্য কঠিন।
লোপেজ : এতো কিছুর পরে আর একটা বিষয় জানতে মন চায়, পরবর্তী কাজ কী করছেন?
সোফিয়া : আপনি জানেন, আমি এগুলো নিয়ে খুব একটা ভাবি না। আমি আসলে খানিক বিরতি নিতে চাচ্ছি। তারপর নতুন করে দল গুছিয়ে ভাববো, এরপর কী করতে চাই। একটা কাজ শেষ হওয়ার পর সবসময়ই আমি এমনই চিন্তা করি। কোনো কাজ শেষ করার পর, আমি তার প্রতিক্রিয়া এবং পরে কী করবো তা নিয়ে ভাবি। তারপর আমি যখন খানিকটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, মাথাটা হালকা হয়, তখনই নতুন করে পরিকল্পনা শুরু করি।
লোপেজ : আপনার আগের চলচ্চিত্র দ্য ব্লিঙ রিঙ-এর পরে দ্য বিগাইল্ড নিয়ে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে?
সোফিয়া : আমি মনে করি, দ্য ব্লিঙ রিঙ-এর পরে যাই হোক তা আমার কাছে খুব কুৎসিত লাগবে। আমি সুন্দর এবং পরিচ্ছন্ন কিছু করতে চেয়েছিলাম। এটা অস্পষ্ট কিন্তু দ্য ব্লিঙ রিঙ-এ কিছু বিষয় কঠোরভাবে এসেছে। অথচ আমি শান্ত ও প্রশংসনীয় কিছু করতে চেয়েছিলাম।
লোপেজ : অবসর সময়ে আপনি কোন ধরনের চলচ্চিত্র দেখতে ভালোবাসেন?
সোফিয়া : আমি সাধারণত প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে যেকোনো চলচ্চিত্র দেখতেই ভালোবাসি। আশা করি, দর্শক প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে আমার দ্য বিগাইল্ড দেখবে। দ্য বিগাইল্ড শেষ করার পর এ নিয়ে আমার মধ্যে একটা কেমন জানি বুদ্বুদ কাজ করছে। কিন্তু ফ্রেডেরিক ওয়াইজম্যানের একটি প্রামাণ্যচিত্র আছে। যেটা তিনি ৬০ এবং ৭০ দশকে নির্মাণ করেন। ৭০ দশকের শেষের দিকে তিনি যেটা নির্মাণ করেন, সেটার নাম মডেল। এটা আমার খুব পছন্দের, কারণ এটাতে তেমন কিছু নেই। তবে এটি বিভিন্ন জায়গায় সম্মান অর্জন করেছে। প্রামাণ্যচিত্রটি ফিল্ম ফোরামে দেখানো হয়েছিলো। তার এই চলচ্চিত্র সিরিজ সত্যি প্রশান্তিদায়ক। আমি সবধরনের চলচ্চিত্র পছন্দ করি, সেটা অপরাধমূলক, কমেডি, যেকোনো ধরনের হতে পারে। এই যে এটোমিক ব্লোন্ডি দেখলাম, সেটা মজার!
সূত্র : https://filmschoolrejects.com/interview-director-sofia-coppola-beguiled/; retrieved on 29.07.2017
ভাব-ভাষান্তর : মো. হারুন-অর-রশিদ, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এর পাশাপাশি তিনি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ডট রিপোর্ট-এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত।
harunmcj25@gmail.com
মতামত
এই লেখায় মতামত দিতে লগ-ইন অথবা নিবন্ধন করুন ।